বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ফোরাম বিসিআরএফ এর চৌকস ও দায়িত্বশীল একদল অপরাধ/অনুসন্ধানী সাংবাদিক ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপটে দেশের বিভিন্ন কারাগারের বাস্তব চিত্র উদঘাটনে এক গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানে নামেন। সেই ধারাবাহিক অনুসন্ধান শেষে তারা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জ সম্পর্কে একটি বিশদ ও তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, যেখানে কারা ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা, উন্নয়ন, সীমাবদ্ধতা ও পরিবর্তনের ধারার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উঠে আসে।
২০২৪ সালের ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান শুধু রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনেই নয়, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক খাতেও এক নতুন পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আসে। এরই অন্যতম দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জ, যেখানে গত এক বছরে ব্যাপক সংস্কার, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ও সুশাসনের অনন্য নজির স্থাপন করা হয়েছে।
কারা মহাপরিদর্শক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈযদ মোতাহার হোসেন
উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির
সুশাসনের হাত ধরে পরিবর্তনের যাত্রা:
কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে এই গঠনমূলক পরিবর্তনের পেছনে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন
কারা মহাপরিদর্শক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈযদ মোতাহার হোসেন এবং কারা উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির-এর সার্বিক দিকনির্দেশনায় কারাগারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে লক্ষ্যণীয় উন্নয়ন ঘটেছে, যা আগের কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর ও মানবিক।
সুরাইয়া আক্তার, সিনিয়র জেল সুপার
এ কে এম মাসুম, জেলার
উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রম:
কারাবন্দীদের মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ:
সকল বন্দির প্রতি ন্যায্য ও সম্মানজনক আচরণ নিশ্চিত করা হয়েছে। অভিযোগ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এসেছে।
নতুন প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও পুনর্বাসন:
কারাগারে থাকা বন্দিদের মানসিক উন্নয়ন ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন:
বন্দিদের চিকিৎসা সুবিধা জোরদার করা হয়েছে। কারাগারের ভিতরে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকটাই কমে এসেছে।
পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ উন্নয়ন:
কারাগার প্রাঙ্গণ ও আবাসিক এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়েছে, যা বন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার প্রবর্তন:
কারা ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে। বন্দি তথ্য, অভিযোগ, সাক্ষাৎ এবং ব্যাবস্থাপনা আরও দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য হয়েছে।
মানবিক নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি:
সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার একজন মানবিক, দক্ষ এবং দূরদর্শী কর্মকর্তা হিসেবে খুব অল্প সময়েই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে নারীবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, যেখানে বন্দিদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ ও অধিকার রক্ষার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, জেলার এ.কে.এম. মাসুম প্রশাসনিক দৃঢ়তা, নিয়মশৃঙ্খলা ও কর্মদক্ষতার দিক থেকে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাঁর সময়েই নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে।
উপসংহার
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা হয়েছে। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার তারই বাস্তব উদাহরণ। এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রম, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দক্ষ নেতৃত্ব কারা ব্যবস্থায় এক নতুন সূর্যোদয় ঘটিয়েছে।
এই পরিবর্তন আমাদের আশাবাদী করে, যে রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ—কারা বিভাগ—এখন আর শুধু শাস্তির নয়, বরং সংশোধনের, সহানুভূতির ও পুনর্জীবনের ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।
লেখক,
মোহাম্মদ জাকির হোসেন
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ফোরাম (বিসিআরএফ)
মোবাইল: ০১৬২৩ ৮৮৮৮৬২।
.