
২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই। ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যেই মাত্র চার দিনের ব্যবধানে পাঁচ সাংবাদিককে হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ সাংবাদিক সমাজ শোকস্তব্ধ, ক্ষুব্ধ এবং সংগঠিত হয়ে ওঠে। জাতীয় প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের উপস্থিতিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

এই পটভূমিতে যখন নিরাপদ স্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও দুরূহ হয়ে ওঠে, তখনও সাহস হারাননি কিছু নির্ভীক সাংবাদিক। প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে চা অর্ডারের মাঝেই উপস্থিত হন গোয়েন্দা সংস্থার ইন্সপেক্টর মাসুদ রানা ওরফে বিটু ভাই। তিনি রিমন ভাইকে পাশে নিয়ে জানান, ব্যাংক গেটের বাইরে সেনা বাহিনীর সদস্যরা আপনাদের অবস্থান ও পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইছে, ডিজিএফআই কর্তৃপক্ষও অপ্রত্যাশিত ঝামেলা করতে পারে। মারুফ ভাই-ও রিমন ভাইকে সতর্ক করেন।

ঠিক তখনই শুরু হয় এক ঐতিহাসিক প্রতিবাদের সূচনা—নেতৃত্বে থাকেন একজন কিংবদন্তি, যিনি শুধু নাম নন, নিজেই এক প্রতিষ্ঠান।
নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু: সিংহ সাংবাদিক সাইদুর রহমান রিমন
বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজের সম্মানিত মুখ, সিংহ সাংবাদিক, বহুবার রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত (গোল্ড মেডেলিস্ট), এবং একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত সাইদুর রহমান রিমন ভাই ছিলেন এই আন্দোলনের মুখ্য চালিকাশক্তি।

দেশজুড়ে সাংবাদিকতার বিশেষ অবদান, অসংখ্য শিষ্যকার গড়ে তোলা এবং শত বাধা পেরিয়ে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোয় তিনি বহু সাংবাদিকের কাছে প্রেরণার প্রতীক। তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি—যিনি মামলা-হামলার ভয়, প্রাণনাশের হুমকি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনে দাঁড়িয়েছেন। যখন সাংবাদিক সংগঠনের অনেকেই নীরব থেকেছেন, তখন তিনিই ছিলেন সময়ের সাহসী নেতৃত্ব।
সহযোদ্ধারা ও বাস্তবায়নের রূপরেখা
সাইদুর রহমান রিমন ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা মাঠে নামি সুসংগঠিতভাবে। আমি, আমার সঙ্গে ছিলেন সহযোদ্ধা কল্লোল ভাই এবং নির্ভীক সাংবাদিক শাহ আলম সুরমা। আমরা সম্মিলিতভাবে আন্দোলনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, কর্মসূচি ঘোষণা এবং সংবাদমাধ্যমে প্রতিবাদের ধারা বিস্তারে ভূমিকা রাখি।

গোপন বৈঠক: খিলগাঁওয়ের ছাদে ইতিহাস রচনা
যখন ঢাকার কোথাও নিরাপদ আলোচনা সম্ভব হচ্ছিল না, তখন রিমন ভাই ফোন করেন খিলগাঁওয়ের বিশ্বস্ত সাংবাদিক-বন্ধু ভাই আব্দুল আজিজ-কে। খিলগাঁও রেলগেট এলাকা তখন তুমুল সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ—তবু আজিজ ভাই ১০–১৫ জন যুবক নিয়ে আমাদের নিরাপদে পৌঁছে দেন তাঁর ছাদে। সিঁড়িতে ডাবল তালা, প্রহরী, এবং তার স্ত্রী তানিয়া আপার হাতের নাস্তা—সব মিলিয়ে সেখানেই গড়ে ওঠে এক গোপন বৈঠক।

২০–২২ জন সাংবাদিক উপস্থিত থেকে আন্দোলনের ঘোষণা দেন—রাজপথে অবস্থান, কঠোর কর্মসূচি এবং প্রয়োজনে দেশব্যাপী বিস্তারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। আন্দোলনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয় সাইদুর রহমান রিমন ও মোহাম্মদ মাসুদ-এর কাঁধে; সমন্বয়ে সহায়কের ভূমিকা পান সোহাগ আরেফিন।
এই বৈঠকে ছিলেন—
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ফোরাম, ঢাকা প্রেসক্লাব, মহানগর সাংবাদিক এসোসিয়েশন, মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ও রাজধানীর থানাভিত্তিক প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ। সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দা রিমি কবিতার প্রস্তাবে ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্ল্যাটফর্মের নাম রাখা হয়—“সাধারণ সাংবাদিক সমাজ”।

সাংবাদিক-বন্ধু দ্বয়: আব্দুল আজিজ ও শাহ আলম সুরমা
সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে যাঁরা দলীয় সীমারেখা অতিক্রম করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন, তাঁদের মধ্যে দুইটি নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো—আব্দুল আজিজ ও শাহ আলম সুরমা। আজিজ ভাই শুধু রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না—তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের আশ্রয়দাতা, আন্দোলনের সহায়ক এবং নীরব সংগঠক।

তার পাশে ছিলেন শাহ আলম সুরমা, এক প্রতিবাদী যোদ্ধা, যিনি সাংবাদিকতার নৈতিকতা ও সাহসিকতা দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সাংবাদিক জুয়েল খোন্দকার বলেন—
“সাধারণ অবস্থায় আজিজ ভাই সরকারদলীয় কর্মী—কিন্তু সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনা ঘটলেই তিনি ও সুরমা ভাই দল, পদবি ভুলে ‘যুদ্ধ মোডে’ ঢুকে পড়েন।”
আর সাইদুর রহমান রিমন ভাই বলেন—
“সুরমা আলম ভাইয়ের তুলনা আমি কারও সঙ্গেই দিতে পারি না। তিনি অনন্য, অসাধারণ। আমার বাবার মতো ভাই তিনি।”
ইতিহাস গড়ার দিন: ৩১ জুলাই ২০২৪
সকলের ঐক্য, সাহস এবং সংগঠনের ফসল—৩১ জুলাই ২০২৪।
প্রায় ৫০০ জন সাংবাদিক ও ২৩টি সংগঠন একত্র হয়ে রাজপথে গর্জে ওঠে। “সাধারণ সাংবাদিক সমাজ”-এর ব্যানারে আয়োজিত সেই সমাবেশ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়ে ওঠে সাংবাদিক ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন।

শ্রদ্ধা ও স্যালুট
সাইদুর রহমান রিমন ভাই—সাংবাদিকতার এক সাহসী মুখ, সংগঠনের প্রাণ, এবং শত সহস্র সাংবাদিকের অভিভাবক।
আব্দুল আজিজ ভাই ও শাহ আলম সুরমা ভাই—প্রতিবাদের সময়ে যাঁরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছিলেন। দলীয় সীমানা ভুলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার জন্য তাঁরা হয়ে ওঠেন অগ্রদূত।
তাঁদের প্রতি রইল আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।
অভিনন্দন ও স্যালুট:
সাইদুর রহমান রিমন ভাই, আজিজ ভাই (Press Aziz), ও শাহ আলম ভাইকে (Surma Alam)।